Sunday, September 30, 2018

ডেঙ্গু জ্বরের চিকিৎসা


ডেঙ্গু জ্বর কি ?
ডেঙ্গু ভাইরাস জনিত রোগ এটা এডিস মশা দ্বারা ডেঙ্গু রোগীর থেকে সুস্থ মানুষের দেহে সংক্রমিত হয় এডিস মশা দেখতে গাঢ় নীলাভ কালো রঙের, মশার সমস্ত শরীরে আছে সাদা সাদা ডোরা কাটা দাগ এডিস মশা সাধারণত দিনের বেলায় কামড়ায় বেশির ভাগ ডেঙ্গু হয় বর্ষার সময় এই ভাইরাস মানুষের শরীরে প্রবেশের পর থেকে ১৫ দিনের মধ্যে লক্ষণ গুলো প্রকাশ পায়

ডেঙ্গু জ্বর কত প্রকার ও কি কি ?
ডেঙ্গু সাধারণত দুই ধরনের হতে পারে
  • ক্লাসিক্যাল জ্বর এবং
  • হেমোরেজিক জ্বর

ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ গুলো কি কি ?
ক্লাসিক্যাল ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ :
  1. তীব্র জ্বরের সঙ্গে কাঁপুনি, জ্বর ১০৩ থেকে ১০৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট  উঠতে পারে
  2. মাথাব্যথা
  3. মাংসপেশি এবং গিঁটে প্রচণ্ড ব্যথা
  4. গলা ব্যথা
  5. খাওয়ায় অরুচি
  6. বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া
  7. জ্বর শুরু হওয়ার তিন চার দিন পর ত্বকে র্যাশ (লাল লাল ফুস কুড়ি) বের হয়৷

হেমোরেজিক ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ :
এটি ডেঙ্গুর মারাত্মক অবস্থা এক্ষেত্রে রোগীর ত্বকের নিচে রক্ত জমাট বাধে এবং দেহের বিভিন্ন অঙ্গ যেমন পাকস্থলী অন্ত্রে রক্ত ক্ষরণ ঘটে ৷এ অবস্থায় রোগীর মৃত্যু ঘটতে পারে
জ্বর ১০৬ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত উঠতে পারে
  1. তীব্র জ্বরের সঙ্গে কাঁপুনি
  2. মাথা ব্যথা
  3. মাংসপেশি এবং গিঁটে প্রচণ্ড ব্যথা
  4. গলা ব্যথা
  5. খাওয়ায় অরুচি
  6. রক্ত বমি
  7. ত্বকে র্যাশ (লাল লাল ফুসকুড়ি) বের হয়
  8. নাক দিয়ে রক্ত পড়া
  9. মাড়ি দিয়ে রক্ত পড়া
  10. পায়খানার সঙ্গে রক্ত পড়া
  11. প্রস্রাবের সঙ্গে রক্ত পড়া
  12. শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে
  13. রক্তের চাপ কমে যায়
  14. লসিকা গ্রন্থি ফুলে যায়
  15. চোখ লাল হয়ে যায়
  16. নাড়ীর গতি বেড়ে যায়
  17. রোগীর হাত-পা ঠাণ্ডা হয়ে যায়
  18. পেটে তীব্র ব্যথা হয়
  19. রোগী অজ্ঞান হয়ে যেতে পারে

ডেঙ্গু জ্বর হলে কি কি পরীক্ষা বা টেস্ট করা উচিত ?
ল্যাবরেটরিতে রক্ত পরীক্ষা করলে ডেঙ্গু রোগ নির্ণয় করা যায় মূলত তিনটি পরীক্ষা করা হয় ডেঙ্গু নির্দিষ্ট এন এস ওয়ান অ্যান্টিজেন (NS1-non structral), আই জি এম (IgM) অ্যান্টিবডি এবং আই জি জি (IgG) অ্যান্টিবডি নির্ণয়ের জন্য জ্বর হবার দিনের মধ্যে এন এস ওয়ান অ্যান্টিজেন পাওয়া যায় দিন পর রক্তে আসে আই জি এম অ্যান্টিবডি আই জি জি অ্যান্টিবডি আসে ডেঙ্গু সংক্রমণের অন্তত এক মাস পর এলাইজা (ELISA) পদ্ধতিতে এই সব পরীক্ষা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) এবং ভারত সরকার কর্তৃক স্বীকৃত সাধারণত জ্বর শুরু হবার দিন পর্যন্ত রক্তে থাকে NS1 অ্যান্টিজেন দিন পর রক্তে আসে IgM অ্যান্টিবডি প্রায় মাস পর আসে IgG অ্যান্টিবডি NS1 অ্যান্টিজেন IgM অ্যান্টিবডি কিছুদিন পরে রক্ত থেকে মিলিয়ে যায়,কিন্তু IgG অ্যান্টিবডি রক্তে থেকে যায় সারাজীবন
ডেঙ্গু জ্বর কিভাবে প্রতিরোধ করা যায় ?
রোগের কোন টিকা নেই তাই প্রতিরোধ ব্যবস্থা নিতে হয় এজন্য
জমে থাকা খোলা পাত্রের পানিতে এডিস মশা ডিম পাড়ে পোষা প্রাণির খাবার পাত্র, পানির পাত্র, ফুল গাছের টব, নারকেলের মালা ইত্যাদিতে পানি জমে থাকতে পারে সেগুলো পরিষ্কার রাখবেন
দিন রাতে আলোতেও এরা কামড়ায় তাই দিনের বেলাতেও মশারী ব্যবহার করুন
বাচ্চাদের যারা স্কুলে যায়, তাদের হাফপ্যান্ট না পরিয়ে ফুল প্যান্ট বা পায়জামা পরিয়ে স্কুলে পাঠাতে হবে।
আক্রান্ত ব্যক্তিকে যাতে মশা কামড়াতে না পারে তার ব্যবস্থা নিতে হবে
ডেঙ্গু জ্বরের চিকিৎসা কি ?
  • জ্বরের জন্য প্যারাসিটামল সেবন করতে হবে, দিনে সর্বোচ্চ বার
  • পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে হবে
  • জ্বর কমানোর জন্য বার বার শরীর মুছে দিতে হবে
  • জ্বরে পানি শূন্যতা দেখা দেয়।তাই প্রচুর পানি তরল জাতীয় খাবার, যেমনওরালস্যালাইন, ফলেরজুস, শরবত ইত্যাদি পান করতে হবে
  • বমির কারণে যদি কোন রোগী পানি পান করতে না পারেন সেক্ষেত্রে, শিরা পথে স্যালাইন দিতে হবে
  • অ্যান্টিবায়োটিক, অ্যাসপিরিন বা অন্য কোন ব্যথা নাশক ওষুধ একেবারেই সেবন করা যাবে না
  • ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভারে আক্রান্ত হলে অবশ্যই হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা রব্যবস্থা করতে হবে ধরনের রোগীকে প্রচুর পরিমাণে পানি পান করাতে হবে
  • সাধারণত ডেঙ্গু আক্রান্ত সব রোগীকেই রক্ত দেওয়ার প্রয়োজন হয় না রক্তের প্লাটিলেটের পরিমাণ ১০ হাজারের কম হলে অথবা শরীরে রক্ত ক্ষরণ হলে প্লাটিলেট কনসেন্ট্রেশন দেওয়ার প্রয়োজন হতে পারে সিরাম অ্যালবুমিন গ্রাম / ডেসিলিটারের কম হলে অথবা আক্রান্ত ব্যক্তি শকে গেলে প্লাজমা বা প্লাজমা সাবস্টিটিউ দিতে হয় যদি রক্তে প্লাটিলেট কাউন্ট ৫০ হাজারের নিচে নেমে যায় তবে জরুরি ভিত্তিতে রক্ত সংগ্রহ করে রাখতে হবে


'' ডেঙ্গু জ্বরের কারণে শ্বাসকষ্ট হলে, পেট ফুলে পানি এলে, শরীরের কোনো অংশে রক্তপাত হলে, প্লাটিলেটের মাত্রা কমে গেলে, অতিরিক্ত ক্লান্তি বা দুর্বলতা দেখা দিলে, প্রচণ্ড পেটে ব্যথা, বমি বমি ভাব বা বমি হলে, প্রস্রাবের পরিমাণ কমে গেলে, জন্ডিস দেখা দিলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে চিকিৎসা দেয়া উচিত । ''